ঐতিহ্যগতভাবে পাহাড়ি জনগন পাহাড়ি রাজনৈতিক সংগঠন কর্তৃক দমন-পীড়ন হয় এবং বাঙালি সংগঠন কর্তৃক বাঙালিরা দমন-পীড়ন হয়। বাঙালিরা পাহাড়ীদের কৃত্রিম বিভাজন তৈরি করে সফলতার মুখ দেখেছে। অপরদিকে পাহাড়িরা বাঙালিদের বিভাজন তৈরি করে রাস্ট্র ক্ষমতায় যাবে, প্রতিনিধিত্ব করবে – সেটা এখনো বিগত ৫৪ বছরের ইতিহাসে কোন প্রমান পাওয়া যায় নি এবং নজিরবিহীন।
এক সময় পাহাড়ীদের জনসংখ্যা বেশি ছিল এবং জনপ্রতিনিধি করতে পেরে ছিলো যা বর্তমানে অকল্পনীয়। জাতীয় রাজনীতিতে অনেক পাহাড়ি অংশগ্রহণ করে থাকলেও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের দৃষ্টিতে দালাল, সুবিধাবাদী, দুলো ইত্যাদি ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করা হয়। যদিও সংগঠন সমূহের নিজেরাই দালালী করে এবং সাধারণ মানুষের মনে একেকজন ফেরেস্তা বা সাধু – মহাপুরুষ হিসেবে প্রমান করার ব্যর্থ চেষ্টা করে।
জনগণ সেসব জেনে-বুঝে থাকলে ও নীরবে মাথা পেতে নেয়, নীরবতার মাঝে কাটিয়ে দেয়। কারণ, সেসব বলতে নেই, করতে নেই, দেখতে নেই। মানে -” বড়দের খাবারের টেবিলে দৃষ্টি দিতে বারণ “। এটাই অতীতের বাস্তবতা। ৫ ই আগষ্ট ২০২৪ এ শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর খাগড়াছড়ি জেলার প্রেসক্লাব, আদালত পাড়া, ব্যবসায়িক প্রতিষ্টান, বিভিন্ন অফিস আদালত, যান বাহন অঘোষিতভাবে বিএনপির বাঙালি সমর্থিত অংশ দখলে নেয়।
এটাই অপ্রিয় দৃশ্য সাধারণ জনগন উপভোগ করছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পলাতক, বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে জেল হাজতে অন্তরীণ অবস্থায় রয়েছে। এমন জনশ্রুতি রয়েছে কিন্তু কোনো প্রমান নেই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাতি নেতা, ছাতী নেতা, গিরগিটি নেতা ইত্যাদি ইত্যাদি কাউকে গোপনে ঘুষ দিয়ে, ক্ষমা চেয়ে, প্রানভিক্ষা চেয়ে কোনোরকমে সহজ সরল সোজা সাদাসিধা জীবন যাপন করার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন।
কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের শাসনামলে ১৬ ধরে বছর গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসর, জেলা সর্বত্রই চষে বেড়াতো এবং ভালো আয় ইনকাম করেছিল। সেগুলো অনেকে বমি-টমি করতে হচ্ছে৷ তাছাড়া যেসব আওয়ামী লীগের পাহাড়ি নেতা রয়েছেন, তাদেরকে কোন পাহাড়ি মামলা দেয়নি, হামলা করে নি। যদি ও ফেসবুকে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টুকটাক আলোচনা সমালোচনা করেছে, নিন্দা জানিয়েছে ।
যেমন খাগড়াছড়ি বার কাউন্সিলের সভাপতি এডভোকেট আশুতোষ চাকমা, প্রাক্তন এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, প্রাক্তন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু ইত্যাদি ইত্যাদি। অধিকন্তু বাঙালিদের বিরুদ্ধে ও বাঙালিরাই মামলা দিয়েছে, হামলা করেছে। কোনো পাহাড়ি বাঙালিকে মামলা – হামলা করে নি। বিএনপি – আওয়ামী লীগের বাঙালি অংশটি তৃনমুল পর্যায় থেকে রাস্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তৃনমূল পর্যায়ে লালন – পালন হয়ে আসছে। ফলে, জংগলে প্রভাব না থাকলে ও শহরে, হাট বাজারে, অফিস আদালত, কোর্ট – কাচারী তাদের প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে।
জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে পাহাড়ি অংশ আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন সমূহের নেতাকর্মীদের নিকট প্রতিবন্ধী। ফলে, মাঠ পর্যায়ে কমিটি, সমিতি ইত্যাদি ইত্যাদি নেই ও ছিল না। থাকলেও সেটা নিতান্ত গোপনীয় ও নীরবতায়। তবে সাধারণ জনগন ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন সমূহের নেতাকর্মীদের ইংগিত, স্বদিচ্ছার উপর নির্ভর করে। অনেকটা জোর করে চাপিয়ে দেয়া। ২রা ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালের আগে শান্তি বাহিনীর লোকেরা বাঙালিদের উপর আক্রমণ, সেনাবাহিনীর উপর আক্রমণ করেছিল ।
বিগত ২৭ বছর ধরে কোনো বাঙালির উপর আক্রমণ করার কোনো পাহাড়ির দুঃসাহস নেই বরং মাথানিচু করে নীরব দর্শক – পাঠক হিসেবে থাকবে নতুবা পালিয়ে গিয়ে নিজেকে নিভৃত করে আত্মগ্লানি করে রোমন্থন করার সুযোগ সৃষ্টি করবে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বাঙালি জনগোষ্ঠীর পাহাড়ীদের উপর আক্রমণ করতে এখনো কোনো বিধিনিষেধ নেই এবং ইতিপূর্বে ও ছিল না। তাদের ইচ্ছে করলে যে কোন সময় সাম্প্রদায়িক হামলা করতে পারে। তখন তাদের বিএনপি – আওয়ামী লীগ বিভাজন থাকে না, থাকবে না মানে, সমাজের প্রচলিত প্রবাদ মতে -” রসূনের খোয়াঁ আলাদা আলাদা হলেও গোড়া এক “।
প্রশ্ন হলো- বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ খাগড়াছড়ি জেলাকে কিভাবে দেখছেন? পাহাড়ি প্রতিনিধি নাকি বাঙালি প্রতিনিধি? রঙিন চশমায় নাকি সাদাকালো চশমার দৃষ্টিতে? বাঙালি প্রতিনিধি সিলেকশন করলে – ইলেকশনে কি জামানত ফেরত পাবে নাকি নির্বাচিত হবে, প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ হবে? প্রশ্ন হলো – বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের শাসনামলে সমর্থিত ভোটারগন কোন দিকে ছুটবে? অবাধ- নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে নিশ্চয়ই ভোটাধিকার থাকবে। আর যদি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন না হয়ে ভোটকেন্দ্র দখল নির্বাচন হলে তো কথাই নেই। সাথে যদি যোগ হয় স্থানীয় প্রশাসনের কর্তৃত্ব।
সবশেষ সংযোগ করি-, পিসিজেএসএস, পিসিজেএসএস ( এমএন) , ইউপিডিএফ ( গনতান্ত্রিক) খাগড়াছড়ি জেলার আসনের বিপরীতে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দিতা করার তেমন দৃশ্য অতীত এবং বর্তমানে ও পর্যবেক্ষন হয় নি। তবে, ইউপিডিএফ অতীতে বহুবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল এবং বহুবার হেরেছে। আগামীতে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কি অংশগ্রহণ করবে? পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন সমূহকে শাসকশ্রেণি অক্মিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে যখন প্রয়োজন অনুভব করেছিল – তখনই যথাসময়ে প্রয়োগ করেছে সকল আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনকে। আগামীতে ও কি তাই পাহাড়ের মানুষদের পর্যবেক্ষন করার সুযোগ সৃষ্টি করবে?
মূলত খাগড়াছড়ি জেলার বিএনপির নেতৃত্ব দুটোকে দৃশ্যমান হয়। একজন সমীরণ দেওয়ান, প্রাক্তন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান এবং অপরজন ওয়াদুদ ভুঁইয়া, প্রাক্তন এমপি ও প্রাক্তন উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান। বিএনপি কাকে টিকেট দেবে নাকি কৌশলগত কারণে একজনকে টিকেট দিয়ে আরেকজনকে বিদ্রোহী নেতা হিসেবে প্রতিদ্বন্দী তৈরি করবে? ওয়াদুদ ভুঁইয়া সাহেব এর অতীতের আওয়ামী লীগ শাসনামলের দৃষ্টিতে একজন বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত। তবে সেটা বাবু সমীরণ দেওয়ান এর অনুপস্থিত।
ওয়াদুদ ভুঁইয়া সাহেব নির্বাচিত হলে দিনের বেলায় উনাকে মোবাইল ফোন করে পাওয়া যায় না তবে রাতের যে কোন সময় কল করা যায় এমন গুজব রয়েছে যদি ও বাবু সমীরণ দেওয়ান এর সেরকম শোনা যায় নি তবে কিছুটা অহংকারী ভাব রয়েছে এমন কথা লোকমুখে শোনা যায় । মোদ্দা কথা, উনারা দুজনের যে কেউ নির্বাচিত হলে উনারা দুজনেই লাভবান হবেন, দুজনের জন্য সুসংবাদ থাকবে। আর হ্যাঁ – সংযোগ করি-, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলে, পাহাড়ীদের বিজু উৎসব ঘনিয়ে এলে বাঙালিদের পক্ষ থেকে সাম্প্রদায়িক হামলা করানো হয়, বিভিন্নভাবে পরিবেশ উত্তপ্ত করা হয়।
যদি সেরকম পরিবেশ তৈরী হয়, বাবু সমীরণ দেওয়ান, ওয়াদুদ ভুঁইয়া সাহেব কি সদাপ্রস্তুত আছেন? সামাল দিতে পারবেন তো? লোকশ্রুতি রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা সেরকম পরিবেশ তৈরী হলে তিনি স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করার চেষ্টা করেন। তাও সম্ভব না হলে সরাসরি ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে হায়- হ্যালো করে পরিবেশ ধামাচাপা দিয়ে থাকেন। ততদিন পর্যন্ত সাধারণ জনগন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে।