মোঃ আব্দুল খালেক খাগড়াছড়ি:-
বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের বিভিন্ন কাজের প্রশংসা এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে এই কাজটি করার চেষ্টা করছেন ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা-এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় মহল।
সর্বশেষ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে ইউপিডিএফের বৈঠক নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। একটি সূত্র জানায়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে ঢাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা।
বিগত সরকারের সময় সন্তু লারমা পাহাড়ের রাজনীতিতে আলাদা বলয় তৈরি করে পাহাড়কে নিজের কবজায় নিয়েছিলেন। এবার তার দেখানো পথ ধরে আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউপিডিএফ চাইছে অন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে থেকে নিজেদের আধিপত্যের ঘাঁটি মজবুত করতে।
সর্বশেষ অনুষ্ঠিত বৈঠকে মাইকেল চাকমার সাথে অংশ নেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি জানান মাইকেল চাকমা।
পাহাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, ইউপিডিএফ আর জেএসএস এরা সবাই অস্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। খুন অপহরণ, আর চাঁদাবাজি। এই ৩ অপকর্ম যাদের প্রধান ব্যবসা, সেই সশস্ত্র আঞ্চলিক গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফ-কেই কিনা আলোচনার নামে রাজনৈতিক বৈধতা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তবর্তী সরকারের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন?
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি এবং বাঙালিরা সর্বত্র উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ইউপিডিএফ কোনো জাতীয় রাজনৈতিক দল নয়। অথচ তাদের ডেকে আলোচনার নামে এই ধরণের বৈঠক পাহাড়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও শান্তির পরিবেশ বজায় রাখতে আগামি দিনে হুমকি হয়ে কাজ করবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে পার্বত্য অঞ্চল থেকে হুন্ডির মাধ্যমে ভারতীয় সীমান্তে টাকা পাচার করে অস্ত্র কেনা, মোবাইল অপারেটর রবির কাছে টাকা না পেয়ে একাধিক উপজেলায় ইন্টারনেট লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া, আধিপত্য বিস্তার করতে যখন তখন অস্ত্রের মুখে লোকজনকে তুলে নেওয়াসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
১৯৯৮ সালের ২৬ জুন অপহরণকান্ডের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে জন্ম নেয় এই সশস্ত্র দলটি। আর এরপরপরই তারা অন্ধকার জগতে গড়ে তোলে নিজেদের আধিপত্য। দীর্ঘ ২৭ বছর পর হঠাৎ করে সংগঠনটির প্রকাশ্যে আসার তোড়জোড়কে নতুন ষড়যন্ত্র বলে অভিমত দিয়েছেন পাহাড় বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক সূত্র জানায়, পাহাড়ে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে আঞ্চলিক দলগুলোর নিবন্ধনে শর্ত শিথিল করার দাবী জানান ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা।
পাহাড়ের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এখনোও ইউপিডিএফের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটে সেখানকার মানুষজনের। ‘এই বুঝি তুলে নিয়ে গেল’—এমন ভয়ই তাদের নিত্যসঙ্গী। অথচ মাইকেল চাকমা বৈঠকে নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কথা বলে কৌশলে নিজেদের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করেছেন।
সচেতন মহল বলছেন, ইউপিডিএফ মুখে যতই গণতন্ত্রের কথা বলুক, বাস্তবে তারা কখনও গণতান্ত্রিক পথে হাঁটেনি। জন্মলগ্ন থেকে এই সংগঠনটি বড় হয়েছে অপকর্মের ভেতর দিয়ে।
কেবল তারাই নয়, তাদের পথ ধরে আধিপত্য বিস্তার করতে পাহাড়ে হানাহানিতে লিপ্ত রয়েছে জেএসএস, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক, জেএসএস সংস্কার, এমএনপি, কেএনএফসহ আরো অনেক সশস্ত্র দল। তবে কি তাদের সাথেও বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন?-এমন প্রশ্ন পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় বাসিন্দাদের।
এদিকে বৈঠকে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমা।
তিনি বলেন, ‘এই চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি। শান্তিচুক্তির সাংবিধানিক ভিত্তি ছিল না। এটা দুর্বল চুক্তি। সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকায় যেকোনো সরকার চাইলে তা বাতিল করতে পারে।’
ইউপিডিএফকে অনেকেই ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে থাকে, এমন প্রশ্নের জবাবে মাইকেল চাকমা সরাসরি বলেন, ‘আমরা কী ধরনের সংগঠন, কী নিয়ে রাজনীতি করি, সেটা কাজের মাধ্যমে প্রতিফলন ঘটে। কে কী বলছে, এটা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই।’