বেশ কিছু দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করেন পোশাকশ্রমিকেরা।বেতনের দাবি, চাকরি স্থায়ীকরণ, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, নারী শ্রমিকের সমান সংখ্যক পুরুষ শ্রমিক নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরের শ্রীপুর, রাজেন্দ্রপুর, ভোগড়া বাইপাসসহ বেশ কিছু এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এসময় ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনরত শ্রমিকেরা। এতে ওই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে এসব কারখানায় কর্মবিরতি করে আন্দোলনে নামেন শ্রমিকেরা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই বছরের বকেয়া বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট পরিশোধের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকার আরএকে সিরামিক কারখানার শত শত শ্রমিক। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় দুই পাশে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন পরিবহনের হাজারও যাত্রী। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে শিল্প পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করছেন।
আরএকে সিরামিক কারখানার আন্দোলনরত শ্রমিকেরা বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে না। দুই বছরের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট বকেয়া রেখেছে। ‘দেই-দিচ্ছি’ করে শুধু সময় পার করছে। এসব দাবি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে কথা বলতে গেলে তাঁদের অনেক বকাঝকা খেতে হয়। অনেকে আবার চাকরিচ্যুত হন।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকার আরএকে সিরামিক কারখানার শত শত শ্রমিক। সিরামিক কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, ‘শ্রমিকদের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট প্রদানের জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। একটা সিদ্ধান্ত হচ্ছে এ বিষয়ে। কিন্তু কারখানার শ্রমিকদের দাবি, আজকের মধ্যে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট বকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে হবে। এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে জানানোর সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকেরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন।’
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম সোহেল রানা বলেন, ‘সকালে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট বকেয়া পরিশোধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকেরা। বিষয়টি নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার ৪ ঘণ্টা পর বর্তমানে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।’
এদিকে ১৮ দফা দাবিতে সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকায় হেলথ কেয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড কারখানার বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকেরা। সকাল ৯টা থেকে কয়েকজন কর্মকর্তার পদত্যাগ নিশ্চিত করা, শ্রমিক ইউনিয়ন বাস্তবায়ন, বাৎসরিক বেতন সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা বৃদ্ধি, আন্দোলনরত কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত ও হয়রানি না করা, ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ২০ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলন করছেন শ্রমিকেরা।এ ছাড়া কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় ট্রান্সকম বেভারেজে ২০ দফা দাবি জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার থেকে আন্দোলন করের আসছেন শ্রমিকেরা। আজ বুধবার সকালেও তারা ভারতীয় কর্মকর্তাদের অপসারণ, দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিয়োগকৃত শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ীকরণ, ৫ তারিখে মধ্যে বেতন প্রদান, নারী শ্রমিকদের নৈশকালীন ডিউটি বাতিলসহ ২০ দফা দাবি জানিয়েছেন।
অপরদিকে গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস লিমিটেডের সামনে চাকরি প্রত্যাশী শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এসব কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ ছাড়াও শ্রমিক নিয়োগে নারী-পুরুষের বৈষম্য রোধে গাজীপুর মহানগরের বাসন এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা। আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, চাকরিতে পুরুষদের চাইতে নারী শ্রমিকদের নিয়োগে অগ্রাধিকার বেশি দেওয়া হয়। এ ধরনের বৈষম্য চান না তাঁরা।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর শ্রীপুর ক্যাম্পের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আজিজুল হক বলেন, বুধবার সকাল থেকেই কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন করছিলেন শ্রমিকেরা। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান। পরে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। বেলা ১১টা থেকে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুর অংশে যান চলাচল পুরোদমেই স্বাভাবিক হয়েছে।