চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :-
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে স্বৈরাচারী সরকার হাসিনার পতন ঘটে।এরফলে জনগণের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।কিন্তু সরকার পতনের কয়েকদিন পর চারদিকে দখল, চাঁদাবাজি আর লুটপাটের বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে।এতে বেকায়দায় পড়েছে সাধারণ মানুষ।আর এসব অপকর্মে জড়িত পৌরসভার দক্ষিণ ইদিলপুর গ্রামের মোঃ আনোয়ার হোসেন সুমন ( ৩৫)।যারফলে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
এদের মধ্যে ভুক্তভোগীরা কেউ বিএনপি কর্মী হলেও অবৈধভাবে জবর দখল জায়েজ করতে তাদেরকে রাতারাতি আওয়ামী লীগ বানিয়ে ফেলছেন তিনি।আনোয়ার সুমনকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ স্বীকার করেন না।কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন কর্মসূচিতে সাবেক উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা তৌহিদুল হক চৌধুরীর সঙ্গে তাকে দেখা গেছে।যদিও আনোয়ার সুমন স্বীকার করেছেন সে জামায়াতে ইসলামীর কোন কর্মী নন।
৫ ই আগস্ট অবৈধ সরকার হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়।সরকার পতনের পর থেকে সুমনের বিরুদ্ধে একের পর এক দখলের অভিযোগ ওঠে এসেছে গণমাধ্যমের কাছে।তার দখল, নির্যাতন ও হুমকি ধমকি থেকে রেহাই পেতে একই গ্রামের নাছির উদ্দিন (৫৫) সীতাকুণ্ড মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।অনেকেই ক্যামেরার সামনে ভয়ে মুখ না খুললেও দিয়েছেন ভয়াবহ বর্ণনা।
সীতাকুণ্ড মডেল থানায় অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আমি মোঃ নাছির উদ্দিন বিবাদী মোঃ আনোয়ার হোসেন সুমন (৩৫) একি বাড়ির বাসিন্দা।সে এলাকার নামধারী দখলবাজ।সরকার পতনের পর ১১ আগস্ট রবিবার সকাল দশটায় এলাকার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জোর পূর্বক খরিদা ও বায়না সূত্রে মালিকানাধীন জায়গা দখল করিতেছে।এসময় আমি অবৈধ দখল কাজে বাঁধা দিলে তারা আমাকে মারধর করার চেষ্টা করে।আমি অত্র স্থান থেকে এসে কোনভাবে প্রাণে বাঁচি।বিবাদী আমার বায়নাকৃত জায়গা জোর পূর্বক বিক্রেতার ( মফিজের ) নিকট হতে দখল করিতেছে।আমি জায়গায় গেলে বিবাদী আমাকে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হত্যা করিবে মর্মে হুমকি দেয়।
বাদী মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন, সন্ত্রাসী আনোয়ার হোসেন সুমন ভাড়াটে ক্যাডার বাহিনী এনে জায়গা দখলের উদ্দেশ্যে আমার বাড়িতে হামলা চালায়।এসময় ৫০/৬০ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী আমার বাড়ির থাই গ্লাস এবং সোকেস ভাঙচুর করে।এসবে বাঁধা দিলে আমার পরিবারের মহিলাদের উপর নৃশংস হামলা করে।আমার চাচীকে মারার পর চারদিন পর আমার চাচা স্ট্রোক করে মারা যান।সুমন জামায়াত বিএনপির পরিচয় দিয়ে এসব অপকর্ম করছে।আমি সীতাকুণ্ড মডেল থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছি কিন্তু বিবাদী বৈঠকে আসেনি।এক পর্যায়ে দুই সপ্তাহ পর বৈঠকে বসে।আমাকে বাহিরে গিয়ে হুমকি ধমকি দেয়।
আমি তাকে জায়গা না দিয়ে কিভাবে থাকতে পারি সেটা দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করে।আমি জানের নিরাপত্তা চাই যে কোন মূহুর্তে আমার উপর হামলা হতে পারে।আমি প্রশাসনের কাছে জানের নিরাপত্তা চাই। দখলের বিষয়টি অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন সুমনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জামায়াতে ইসলামীর কোন নেতা কিংবা কর্মী না।তবে ভালোবাসার জায়গা থেকে জামায়াত ইসলামীকে ভালোবাসি।আর জায়গা জমির বিষয়টি সম্পূর্ণ পারিবারিক।আমিও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।
এই বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন.. আনোয়ার হোসেন সুমন আমার কর্মী না সে আমাদের সংগঠনের কর্মী।আর সুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ দিতে পারলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।যেহেতু আনোয়ার হোসেন সুমন আমাদের কর্মী সেই সুবাদে মিছিল মিটিংয়ে আসে।সে ইদিলপুর শাখার জামায়াতের কর্মী।কিন্তু তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে সেগুলোর যদি ডকুমেন্ট দিতে পারেন তাহলে তাকে আমি এভয়েড করে চলব।
তাছাড়া সুমন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ছিল।বর্তমানে সুমন জামায়াতের একজন সমর্থক।কেননা জামায়াতের কর্মী হতে হলে কিছু নিয়ম আছে।সেই ধারাবাহিকতায় তাকে তো আর কেউ অস্বীকার করতে পারেনা।যারা অস্বীকার করছে তারা হয়তো জানেন না আর যদি তাদের কাছে কমিটির লিস্ট থাকে তাহলে দিতে বলেন।জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সীতাকুণ্ড থানায় আমরা গিয়েছিলাম।বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হয়েছে বলে জানান তিনি।তবে প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে প্রথমে তাকে কর্মী হিসেবে পরিচয় দিলেও পরে তাকে জামায়াতে ইসলামীর একজন সমর্থক বলে পরিচয় দেন তিনি।অথচ সুমন নিজেই জামায়াতের কর্মী নন বলে স্বীকার করেন।
এই বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জনগণের আস্থা ভরসার নাম।সে সুবাদে সীতাকুণ্ড উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর কোন কর্মী চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও কোন ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নয়।আনোয়ার হোসেন সুমন আমাদের সংগঠনের কেউ না।যদি আমাদের দলের নাম ব্যবহার করে কোন দুষ্কৃতকারী অনৈতিক কাজ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব বলে জানান তিনি।
পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মোঃ শাহাবুদ্দিন বলেন, মোঃ আনোয়ার হোসেন সুমন সরকার পতনের পর থেকে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় তাকে জামায়াতের আমীর বার বার নিষেধ করেছেন এবং বুঝিয়েছেন।সীতাকুণ্ড পৌরসভা ইসলামী ছাত্রশিবিরের দায়িত্ব ছিল সুমনের।সেই সুবাদে সে আগের প্রভাব খাটিয়ে এসব করতে পারে।সে আমাদের ইদিলপুর গ্রামের জামায়াতের কোনো কর্মী নন।
এই বিষয়ে সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি মোঃ মজিবর রহমান বলেন, কয়েক মাস আগে আমি সীতাকুণ্ড মডেল থানায় যোগদান করেছি।এই বিষয়ে আমি অবগত নই।আর এই বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগের তদন্তকারী এস আই বুলবুল বলেন, উভয়পক্ষ সীতাকুণ্ড মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।জায়গা সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে থানায় বৈঠকের এক পর্যায়ে সেটি গ্রামের মাতব্বরদের কাছে চলে যায়।এখানে সুমন দেড় ফুটের জায়গা পেলেও তিন ফুট দাবি করছেন। গ্রামের সালিশে কি সিদ্ধান্ত হয়েছিল জানা নেই।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মোঃ আনোয়ার হোসেন সুমনের সঙ্গে তাদের কোন পারিবারিক সম্পর্ক নেই।এই ঘটনার পর মৃত্যু হুমকির মুখে পড়েছে নাছির উদ্দিন রফিক।তবে আনোয়ার হোসেন সুমনের খুঁটির জোর কোথায় সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।কিভাবে দলের বাহিরে থেকে জামায়াত ইসলামীর মত একটি ইসলামী দলে প্রকাশ্যে মিছিল করে সেটা নিয়ে রয়েছে উৎকণ্ঠা।অবৈধ সরকার হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ১১ আগস্টের ঘটনার লাঠি হাতে সুমনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।পরে একি বাড়ির মহিলাদের পিটিয়ে আঘাত করার গুরুতর অভিযোগ উঠে সুমনের বিরুদ্ধে।
হামলার শিকার নাছির উদ্দিন রফিকের চাচী সাহেদা বলেন, জোর পূর্বক জমি দখলের উদ্দেশ্যে আনোয়ার হোসেন সুমন আমার উপর হামলা চালায়।আজ ১১ নভেম্বর প্রায় তিনমাস হয়েছে এখনো পর্যন্ত বাম হাতের ব্যাথা সেরে উঠেনি।আমি নিদারুণ যন্ত্রণায় ভুগছি।অথচ জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে আমি জড়িত ছিলাম না।আমি আমার স্বামীকে গোসল করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে হুমকি ধমকি দেয়।এই ঘটনার কয়েকদিন পর আমার স্বামী মারা যায়।
ভুক্তভোগী সেনোয়ারা ও মনোয়ারা বেগম বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের ৬ দিন পর এই ঘটনা ঘটে।তিন মাস অতিবাহিত হলেও আমরা কোন বিচার পাইনি।বাড়িতে পুরুষ মানুষ না থাকায় সুমন আমাদের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জখম করে।আমরা মহিলা হওয়া সত্ত্বেও সে উগ্র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছে যদি পুরুষ মানুষ থাকত তাহলে তাকে মেরে ফেলত। সীতাকুণ্ড মডেল থানায় বৈঠকের ডেট দেওয়ার পর সেটি গ্রামের মাতব্বরদের কাছে চলে আসে।কিন্তু এখানে কোন বিচার হয়নি।
কেননা আমার ভাসুর ওইদিন মাথা ঘুরে পড়ে যায়।আমরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।অন্তি বিলম্বে তাকে গ্রেফতার করা হোক।সে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পারিবারিক হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে।সে আমাদের পরিবারের কোন সদস্য কিংবা আত্বীয় নন।সে বাহির থেকে ৫০/৬০ জন সন্ত্রাসী এনে বাড়ির থাই গ্লাস ভাঙচুর চালায়।আমাদের আওয়ামী পরিবার বলে কৌশলে জায়গা দখলের চেষ্টা করে।এছাড়া আনোয়ার হোসেন সুমনের মা বানোয়াট কথা বলে আবেগ দেখিয়ে লোক জড়ো করে।