আল আমিন স্টাফ রিপোর্টার :-
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার রানীশিমুল ইউনিয়নের বালিজুড়িতে অবৈধ বালু উত্তোলন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে থানার ওসির বিরুদ্ধে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে বালু খেকুদের অবৈধ বালু উত্তোলনের চলছে মহোৎসব। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে আইন অমান্য করে থানাপুলিশ ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালু উত্তোলনকারীরা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নদী ও ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে।
এতে স্থানীয় পরিবেশ এবং নদীভাঙন পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। দিনের বেলায় নদীতে ড্রেজার মেশিন কেউ বন্ধ রাখেন আবার কেউ অন্যত্র সরিয়ে রাখলেও সন্ধ্যার পরপরই জমে উঠে সোমেশ্বরী নদীর পশ্চিম তীরে বালু খেকুদের রমরমা ব্যবসা। বালিজুড়ির বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বালু ব্যবসায়ীরা কোনো ধরনের লাইসেন্স ছাড়াই যত্রতত্র বালু উত্তোলন করছে। একদিকে সরকার হারাচ্ছে বিশাল রাজস্ব, অন্যদিকে পরিবেশগত বিপর্যয়ের শঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে।
এছাড়া, নদীর গতি প্রকৃতি পরিবর্তন হওয়ায় তীরবর্তী জমি ভাঙনের শিকার হচ্ছে এবং কৃষকদের ফসলি জমি কাচা রাস্তাগুলো ধ্বংস হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান,দীর্ঘদিন ধরে বালিজুড়িতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ব্যবসা করে আসছিলেন আজাদমিয়া,জুনায়েদ, আব্দুলহালিম, রব্বানী, নাহিদ, গোলাপ, এরশাদ ও আহাদ আলীসহ ২৫/৩০ জনের একটি প্রভাবশালী মহল। বালিজুড়ি রাঙ্গাজান ও খাড়ামোড়াসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় তারা বালু উত্তোলন করে। তাদের মধ্যই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান আব্বাস উদ্দিন। বালিজুড়ি বাজারে তার রয়েছে নাম মাত্র একটি মুদি দোকান তবে এর পাশাপাশি তিনি সেখানকার অন্যতম অবৈধ বালু ব্যবসায়ী।
টানা সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় তিনি দলের প্রভাব খাটিয়ে বেপরোয়া ভাবে দিনরাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের রমরমা ব্যবসা করেন। তার দাপটে এর আগে কেউ কথা বলেন নি। আরও জানান, গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দেশ ত্যাগের খবর শোনে ভেঙে পড়েন আব্বাস। কিছুদিন তার বালু ব্যবসার কার্যক্রম বন্ধ রাখার পর মাস খানেক আগে থেকে আবারও তিনি শুরু করেন বালু উত্তোলন ব্যবসা।
তার নেতৃত্বে চলে বালিজুড়ির রাঙ্গাজান ও খাড়ামোড়া গ্রামে ড্রেজার মেশিন। বালু উত্তোলন করে কখনো সাদা,লাল চিকন ও মোটা বালুর সিমবল রাখা হয় তার বাড়ির সামনে। আর রয়েলটি নিলেই এসব বালু বিক্রির পান বৈধতা। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক প্রতি বালু বিক্রি করেন ৩৫/৪০ হাজার টাকা।
এদিকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে নড়েচড়ে বসেন ছাত্র সমাজ। মাঝেমধ্যে অবৈধ বালু পাচারের সময় তার বালু ভর্তি গাড়িও জব্দ করা হয়। আব্বাস উদ্দিন তার বালু উত্তোলন ব্যবসা এবার টিকিয়ে রাখতে বেশ কিছুদিন যাবৎ শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম খান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে লোকমুখে ছড়াচ্ছে নানান ধরনের মিথ্যা গুজব।
সম্প্রতি বালু ব্যবসায়ী আব্বাস উদ্দিন, যিনি বালু খেকুদের পৃষ্ঠপোষকতার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি স্থানীয়দের। ইতিমধ্যে ওসির বিরুদ্ধে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ারও মিথ্যা অভিযোগ তুলে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন আব্বাস উদ্দিন। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে তারা আরও বলেন, যদি এসব বালু খেকুদের লাগাম টেনে ধরা না হয়, তবে রাঙ্গাজান,খাড়ামোড়া সহ বালিজুড়ির বিভিন্ন এলাকা ভাঙনের শিকার হতে পারে, যা কৃষি ও পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে নাজুক করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে, যা প্রশাসনকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে বলেও জানান তারা। এ ব্যাপারে বালু ব্যবসায়ী আব্বাস উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর রাত ১১ টার দিকে বালিজুড়ি বাজার থেকে আমাকে পিক আপভ্যানে করে উঠিয়ে নিয়ে যান থানার ওসি স্যার। কালিবাড়ির এক ব্যবসায়ীর বালু বিক্রি বিষয়ে স্যার জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ফিরে আসার সময় তিনি আমার কাছে ভিডিও সাক্ষাৎ নিয়েছেন তবে স্যারকে আমি কোনও টাকা দেয়নি এবং তার বিরুদ্ধে কোথাও লিখিত অভিযোগও করিনি।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম খান সিদ্দিকী জানান, বালু পাচারের সময় ছাত্ররা পাঁচটি বালুভর্তি ট্রাক আটক করে ঝগড়ারচর বাজারে। তবে এসব বালু ছিল বালিজুড়ি ও কর্ণঝোড়ার। আর সেই ঘটনার তদন্তের জন্য আব্বাস আলীকে গাড়ীতে তুলে জিজ্ঞাবাদ করার পর তার ভাই আজাদ ও স্থানীয় বালু ব্যাবসায়ী আহেদ আলীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। তার কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
আমি সম্পূর্ণরূপে আইনের নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করছি। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তাদের এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং এর পেছনে কেবল অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী কাজ করছে। তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যাহত করতে চাইছে।”