স্টাফ রিপোর্টার :-
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বুরুঙ্গা চেল্লাখালী নদীর বালু মহালের ইজারা না নিয়েও ভুয়া রশিদ ব্যবহার করে প্রতিবন্ধী মনতাজ আলী নামের এক বালু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ উপজেলার ১নং পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা ও পোড়াবাড়ি গ্রামের বালু ব্যবসায়ীদের।
জানা গেছে, মনতাজ আলী (৫০) পোড়াবাড়ি গ্রামের মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে। অসহায় হতদরিদ্র ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। দীর্ঘদিন ধরে বালু ব্যবসা করে কোনো বেলা খেয়ে না খেয়ে সাংসারিক অভাব অনটনের মধ্যদিয়ে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন মনতাজ আলী। গত ৫ আগস্ট, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার পর আধিপত্যে বিস্তারে একই ইউনিয়নের ধোপাকুড়া গ্রামের মৃত ওয়াজেদ আলীর ছেলে ফারুক মিয়া (৩৫) পলাশীকুড়া গ্রামের দরবেশ আলীর ছেলে সোহেল রানা,বুরুঙ্গা গ্রামের আলেব আলীর ছেলে রিয়াজুল ইসলাম, উত্তর আন্দারোপাড়া গ্রামের হাফেজ আলীর ছেলে মমিন মিয়া (৩৫),আব্দুল মিয়ার ছেলে সাইদুল (৪০) আমিনুল মিয়া (৪৫),মৃত উমেদ আলী ফকিরের ছেলে হাবে মিয়া (৫৮), হাবে মিয়ার ছেলে মোফাজ্জল (৩৮),উত্তর আন্দারোপাড়া গ্রামের মৃত উমেদ আলীর ছেলে আব্দুল আলী (৬৫), আব্দুল কাদের এর ছেলে মহেজ আলী (৪০),পলাশিকুড়া গ্রামের সোলেমানের ছেলে হারুন মিয়া (৩২),গড়কান্দা গ্রামের মৃত জোনাব আলীর ছেলে শাহাদত হোসেন সামাদ (৩৮) এসব লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে বালু ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করত।
চেল্লাখালী বালু মহালের ইজারাদার না হয়েও তারা গত ২৮ আগস্ট বুরুঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আবারও চাঁদা আদায়ের জন্য চক্রটি হট্টগোল শুরু করে। কেউ তাদের চাঁদা দিতে না চাইলে অথবা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই বালু ব্যবসায়ীদের প্রকাশ্যে মারধর করে রাস্তায় ফেলে রাখত ওইসব চাঁদাবাজরা। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে না চাইলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীদের দাবি, বুরুঙ্গা চেল্লাখালী বালুর মহাল গত ৩ সেপ্টেম্বর বৈধভাবে ইজারা নিয়ে মেসার্স নাফিজ এন্টারপ্রাইজ বালু উত্তোলন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
এর আগে গত ১০ আগস্ট থেকে তারা কিভাবে “মেসার্স নাফিজ এন্টারপ্রাইজ” এর রয়েলটির রশিদ ব্যবহার করে বুরুঙ্গা ও পুড়াবাড়ি গ্রামে প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের নিকট রয়েলটি ছাড়াও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তাদের ওইসব কর্মকাণ্ড কি ধান্ধাবাজি নয়। পোড়াবাড়ি গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বালু ব্যবসায়ী মনতাজ আলী জানান, তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রতিদিন আসত বুরুঙ্গা ও পোড়াবাড়ি গ্রামে। কখনো পথ ঘাটে না পেয়ে চাঁদা নিতে অনুপ্রবেশ করত বসতবাড়িতেও। তর্কবিতর্ক ও ভয়ভীতি দেখিয়ে চলে যেত। স্ত্রী ও সন্তানের কথা ভেবে, নিরুপায় হয়ে ওই চক্রটিকে ধার দেনা করে ৪ লাখ টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য হয়েছি।
পরবর্তীতে তারা নতুন করে আরও পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলে আমি এতো টাকা তদের দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। পরদিন দুপুরে শান্তি মোড়ে ডেকে নিয়ে জনসম্মুখে আমাকে প্রকাশ্যে মারধর করে রাস্তায় ফেলে রাখে। এ ঘটনা শুনে আমাকে উদ্ধার করতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ গেলে তাদেরকেও অতর্কিত হামলা করে। শুধু তাই নয় ওইদিন এদিক থেকে যাত্রীবাহী অটোরিকশা দিয়ে বুরুঙ্গা ব্রিজের পুর্ব দিকে গেলে ওইসব গাড়ির যাত্রী নামিয়ে চালকদেরও মারধর করত চাঁদাবাজরা।
মারধর করে ব্যবসায়ী ও অটোরিকশা চালকদের আটকে রাখায় রাত সাড়ে ৮ টার দিকে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলে শান্তিমোড় ঘেরাও করে। ওই সময় কে বা কাহারা চাঁদাবাজদের গণধোলাই দিয়ে আটককৃতদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।পরবর্তীতে দুটি মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। মনতাজ আলীর সহধর্মিণী রহিমা খাতুন, বড় বোন সুফিয়া খাতুন এবং ছেলে হৃদয় আহমেদের সাথে কথা হলে, আমাদের পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মনতাজ আলী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তাদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যা আমাদের জীবনে প্রচণ্ড সংকট ও হতাশার সৃষ্টি করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার এই ঘটনা যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করবে। সরকারের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ জানিয়ে এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ওইসব চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।
পোড়াগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফারুক মিয়ার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এক পক্ষকে ডাকলে আরেক পক্ষ আসেনা, আরেক পক্ষকে ডাকলে আরেক পক্ষ আসেনা। ঘটনাটি শিথিল অবস্থানে আছে। আমরা চাঁদাবাজির লোকনা সেটা সবাই জানে। ছোট থেকে ব্যবসা করি, ব্যবসা করেই আসতেছি৷ ঘাট ইজারা হওয়ার আগে আমরা রয়েলটি নেই নাই। কি সিষ্টেমে চালানো হয়েছে মেশিন মালিক ও বালু ব্যবসায়ীরাই ভাল জানেন। এ ব্যাপারে মেসার্স “নাফিজ এন্টারপ্রাইজ” এর শেয়ারদার আনিসুর রহমান আনিস বলেন,ঘাট ইজারা নেওয়ার আগে যদি কেউ রশিদ ব্যবহার করে সেটার জন্য আমরা দায়ি না।
পোড়াগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাওলানা মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন,উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় ওই সময় বিভিন্ন ভাবে অনেকটা অনিয়ম আমরা লক্ষ্যে করেছি যার পেক্ষিতে এ রকম একটা অপৃত্তিকর ঘটনাও ঘটে। এভাবে যদি চলতে থাকে যতটুকু দেখছি উভয়পক্ষের আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি চাই সুষ্ঠু ও তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ভাবে এর সমাধান হোক।